, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
জালিয়াপাড়ায় দেশীয় বাংলা মদ সহ ০২ জনকে আটক করেছে সেনা সদস্যরা কালকিনিতে হাতকড়াসহ পালানো সেই আসামি গ্রেফতার কক্সবাজার সৈকতে ৩০০ কোটি টাকার খাস জমি জবরদখল, উচ্ছেদে প্রশাসনের ধীরগতি খাগড়াছড়িতে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষি ভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম শাজাহানপুরে প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করা সেই খালু গ্রেপ্তার ঢাবি’র পরিহারযোগ্য মৃত্যু রোধে আন্তর্জাতিক সচেতনতা দিবস পালিত গাইবান্ধায় ধর্ষণের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ ভান্ডারিয়ায় নির্বাচন কমিশনে এনআইডি রাখার দাবীতে অবস্থান কর্মসূচী ও মানববন্ধন বগুড়ায় ট্রাকচাপায় তিন বন্ধু নিহত আইবিসিএফ টাস্ক কমিটির ৪২তম সভা অনুষ্ঠিত

কক্সবাজার সৈকতে ৩০০ কোটি টাকার খাস জমি জবরদখল, উচ্ছেদে প্রশাসনের ধীরগতি

কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস জমি জবরদখলের চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে জেলা প্রশাসন। আলোচিত এই জমি পূর্বদখলের অভিযোগে ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দিন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণ সরকারের মালিকানাধীন সম্পত্তি এবং ভুয়া দলিল বা জাল খতিয়ান তৈরি করে সরকারি সম্পদ দখলের যেকোনো অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। এই ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সুগন্ধা পয়েন্টের ওই এলাকায় স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে বেশ আগেই। সম্প্রতি সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জমিতে দোকানসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের খবর পাওয়ার পরপরই কক্সবাজার সদরের এসিল্যান্ডের নেতৃত্বে সেখানে অভিযান চালানো হয় এবং নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০০৩ দাগের ৩৯ দশমিক ৭৮ একর জমি ২০১৮ সালে সরকারিভাবে খাসভুক্ত হয়, যা কলাতলী থেকে শুরু করে লাবনী পর্যন্ত বিস্তৃত। এই দাগের ২ দশমিক ৩ একর জমি ১ নম্বর সরকারি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। এই জমি নিয়ে জনৈক সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত মামলা (নং ১০৬৫৭) করলে, ভূমি অফিস তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে (নং ৩৭২৯/২০২৪)। পরবর্তীতে ২৪ সালের ১০ নভেম্বর তিন মাসের জন্য সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। সেই সময় শেষ হওয়ার পর বর্ধিত সময়ের জন্য ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আবারও সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করে ভূমি অফিস।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর ওই জায়গায় মাটি ভরাট ও বেইজ ঢালাইয়ের খবর পেয়ে পরিদর্শনে গিয়েছিল কউক। অভিযুক্ত হিসেবে নাম আসে সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত ও ওবাইদুল হকের। সেখানে তাঁদেরকে ইমারত নির্মাণ ১৯৫২ এর ১০ (২) ধারা মোতাবেক নকশা নোটিশ প্রদর্শনের নোটিশ দেওয়া হয় এবং সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ে তাঁরা জবাব দিতে পারেননি।
কউকের অথরাইজড অফিসার রিসাদ-উন-নবী জানান, সাইট পরিদর্শন করে মৌখিকভাবে বর্ণিত ইমারতের অনুমোদিত নকশা দেখাতে অনুরোধ করা হলে তাঁরা নকশা দেখাতে ব্যর্থ হন এবং তাঁদেরকে সকল প্রকার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা জানান, দখলকারীরা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের কথা বললেও কোনো বৈধ কাগজপত্র জেলা প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি। ফলে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উচ্চপর্যায়ের অনুমতির অপেক্ষা করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন বলেন, সুগন্ধায় সেই জায়গার কাজ বন্ধ করে দিয়ে তাঁদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। হাইকোর্টে তাঁদের করা মামলার বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের সুপ্রিম কোর্টের রায় রয়েছে। ওই জায়গা সরকারের এবং সেখানে কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, কিছুদিন আগে সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত আরও কয়েকজন উকিল নিয়ে কউকের একটি শাখায় যান এবং সেখানে তাঁর পক্ষে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। দীর্ঘ সময় ধরে কথা-কাটাকাটির পর তাঁরা ওই কর্মকর্তাকে অশালীন ভাষায় কথা বলে বেরিয়ে যান। তাঁদের আচরণে সন্দেহ হলে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সরকারের নথিতে জালিয়াতিসহ নানা অসংগতি পায় কউক। এরপর কউক সচ্চিদানন্দের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানায়।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, একটি দুষ্টচক্র বিভিন্ন ভুয়া তথ্য তৈরি করে সরকারি সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করছে। এমনকি রাতের আঁধারেও সেখানে নির্মাণ কাজ চালানোর অপচেষ্টা চলছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। খুব শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন তার নিজস্ব সম্পত্তি ভূমিদস্যু বা দুষ্টচক্রের হাত থেকে রক্ষার্থে যা যা করা প্রয়োজন, আইন অনুযায়ী সবই করবে। এখানে কোনো অবৈধ দখলদার ছাড় পাবে না বলেও তিনি সাফ জানিয়ে দেন।

উল্লেখ্য, সুগন্ধা পয়েন্টের এই মূল্যবান সরকারি জমি দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী মহলের কুদৃষ্টিতে রয়েছে। জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে এটি দখলের চেষ্টা নতুন কিছু নয়। তবে, জেলা প্রশাসকের এই সুস্পষ্ট বার্তা এবং কঠোর অবস্থানের ঘোষণা স্থানীয় সচেতন মহলকে আশান্বিত করেছে। তাঁরা আশা করছেন, প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারি এই সম্পত্তি রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং ভূমিদস্যুদের অপচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

ট্যাগ:

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জালিয়াপাড়ায় দেশীয় বাংলা মদ সহ ০২ জনকে আটক করেছে সেনা সদস্যরা

কক্সবাজার সৈকতে ৩০০ কোটি টাকার খাস জমি জবরদখল, উচ্ছেদে প্রশাসনের ধীরগতি

আপডেট সময়: ১০ ঘন্টা আগে

কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস জমি জবরদখলের চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে জেলা প্রশাসন। আলোচিত এই জমি পূর্বদখলের অভিযোগে ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দিন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণ সরকারের মালিকানাধীন সম্পত্তি এবং ভুয়া দলিল বা জাল খতিয়ান তৈরি করে সরকারি সম্পদ দখলের যেকোনো অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। এই ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সুগন্ধা পয়েন্টের ওই এলাকায় স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে বেশ আগেই। সম্প্রতি সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জমিতে দোকানসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের খবর পাওয়ার পরপরই কক্সবাজার সদরের এসিল্যান্ডের নেতৃত্বে সেখানে অভিযান চালানো হয় এবং নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০০৩ দাগের ৩৯ দশমিক ৭৮ একর জমি ২০১৮ সালে সরকারিভাবে খাসভুক্ত হয়, যা কলাতলী থেকে শুরু করে লাবনী পর্যন্ত বিস্তৃত। এই দাগের ২ দশমিক ৩ একর জমি ১ নম্বর সরকারি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। এই জমি নিয়ে জনৈক সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত মামলা (নং ১০৬৫৭) করলে, ভূমি অফিস তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে (নং ৩৭২৯/২০২৪)। পরবর্তীতে ২৪ সালের ১০ নভেম্বর তিন মাসের জন্য সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। সেই সময় শেষ হওয়ার পর বর্ধিত সময়ের জন্য ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আবারও সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করে ভূমি অফিস।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর ওই জায়গায় মাটি ভরাট ও বেইজ ঢালাইয়ের খবর পেয়ে পরিদর্শনে গিয়েছিল কউক। অভিযুক্ত হিসেবে নাম আসে সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত ও ওবাইদুল হকের। সেখানে তাঁদেরকে ইমারত নির্মাণ ১৯৫২ এর ১০ (২) ধারা মোতাবেক নকশা নোটিশ প্রদর্শনের নোটিশ দেওয়া হয় এবং সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ে তাঁরা জবাব দিতে পারেননি।
কউকের অথরাইজড অফিসার রিসাদ-উন-নবী জানান, সাইট পরিদর্শন করে মৌখিকভাবে বর্ণিত ইমারতের অনুমোদিত নকশা দেখাতে অনুরোধ করা হলে তাঁরা নকশা দেখাতে ব্যর্থ হন এবং তাঁদেরকে সকল প্রকার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা জানান, দখলকারীরা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের কথা বললেও কোনো বৈধ কাগজপত্র জেলা প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি। ফলে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উচ্চপর্যায়ের অনুমতির অপেক্ষা করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন বলেন, সুগন্ধায় সেই জায়গার কাজ বন্ধ করে দিয়ে তাঁদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। হাইকোর্টে তাঁদের করা মামলার বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের সুপ্রিম কোর্টের রায় রয়েছে। ওই জায়গা সরকারের এবং সেখানে কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, কিছুদিন আগে সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত আরও কয়েকজন উকিল নিয়ে কউকের একটি শাখায় যান এবং সেখানে তাঁর পক্ষে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। দীর্ঘ সময় ধরে কথা-কাটাকাটির পর তাঁরা ওই কর্মকর্তাকে অশালীন ভাষায় কথা বলে বেরিয়ে যান। তাঁদের আচরণে সন্দেহ হলে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সরকারের নথিতে জালিয়াতিসহ নানা অসংগতি পায় কউক। এরপর কউক সচ্চিদানন্দের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানায়।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, একটি দুষ্টচক্র বিভিন্ন ভুয়া তথ্য তৈরি করে সরকারি সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করছে। এমনকি রাতের আঁধারেও সেখানে নির্মাণ কাজ চালানোর অপচেষ্টা চলছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। খুব শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন তার নিজস্ব সম্পত্তি ভূমিদস্যু বা দুষ্টচক্রের হাত থেকে রক্ষার্থে যা যা করা প্রয়োজন, আইন অনুযায়ী সবই করবে। এখানে কোনো অবৈধ দখলদার ছাড় পাবে না বলেও তিনি সাফ জানিয়ে দেন।

উল্লেখ্য, সুগন্ধা পয়েন্টের এই মূল্যবান সরকারি জমি দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী মহলের কুদৃষ্টিতে রয়েছে। জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে এটি দখলের চেষ্টা নতুন কিছু নয়। তবে, জেলা প্রশাসকের এই সুস্পষ্ট বার্তা এবং কঠোর অবস্থানের ঘোষণা স্থানীয় সচেতন মহলকে আশান্বিত করেছে। তাঁরা আশা করছেন, প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারি এই সম্পত্তি রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং ভূমিদস্যুদের অপচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।